রেফারেন্সঃ VDVUD7H62DAB7
প্রিয় শাহাদাৎ,
“ডায়বেটিস একটি ক্রমান্বয়ে খারাপ হাবারই অসুখ, আর কোন দিন সারবেও না” এমন কথা কি শুনেছ কারো কাছে?
কোন ভণিতা না করেই বলব যে এই কথা নিয়ে আমার দুটো আপত্তি আছেঃ (১) আমি মনে করি ডায়বেটিস কোন অসুখই নয়, এবং (২) এটা মোটেও ক্রমাবনতিশীল বা নিরারোগ্য অসুখ নয়।
ভাবছ, আমি আসলেই ২য় ধরনের ডায়বেটিস কে রোগ নয় বলে দাবী করলাম কিনা? হ্যাঁ, করেছি! আমি গত তিরিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে ডায়বেটিস এবং বিপাক নিয়ে গবেষণা করেছি। যখন ২য় ধরনের ডায়বেটিক রোগীর কোষের মধ্যে কি ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ করি, সেখানে অসুখ আক্রান্ত বা নষ্ট হয়ে যাওয়া কোন কিছু দেখতে পাই না। বরং সেখানে যা ঘটে, তা অতি স্বাভাবিক। আসলে, অতিরিক্ত চিনি খেয়ে আমাদের দেহ কে চাপের মধ্যে ফেলে দিলে, ঠিক এই ঘটনাই কাম্য।
আমাদের দেহ খানিকটা গ্লুকোজ আমাদের পেশী এবং কলিজায় গ্লাইকোজেন আকারে জমা রাখতে পারে, কিন্তু সে জায়গা পূর্ণ হয়ে গেলে যখন তারা আর নিতে পারে না, তখন আমাদের খাওয়া উদ্বৃত্ত শর্করাকে দেহ চর্বিতে রূপান্তর করে জমা করে, কেননা গ্লুকোজ এর তুলনায় অনেক গুন বেশী চর্বি মানবদেহ জমিয়ে রাখতে পারে (আমাদের অনেকেই দেহের চর্বি ধরে রাখার বিষয়টি খুব নীবিড় ভাবে জানেন) কিন্তু এক সময় চর্বি ধারণ ক্ষমতাও পূর্ণ হয়ে যায়, আর যখন চর্বি রাখার আর জায়গা থাকে না, তখন যে শর্করা তুমি খেয়েছ, তার আর যাবার জায়গা থাকে না, ফলে গ্লুকোজ রক্তে ঘুরে বেরাতে থাকে। এই জন্যই ২য় ধরনের ডায়বেটিস কে সব সময় রোগীর রক্তে উচ্চ মাত্রায় চিনির উপস্থিতি দিয়ে সনাক্ত করা হয়।
আচ্ছা, ২য় ধরনের ডায়বেটিস ক্রমাবনতিশীল বা অনারোগ্য অসুখ – আমি এই দাবী করছি কেন? এই কথার জবাবে তোমাকে আমার মুখের কথায় বিশ্বাস করতে হবে না। হাজার হাজার মানুষ শুধু যে ডায়বেটিসের ক্রমাবনতি থামিয়ে দিয়েছে, তাই নয়; বরং কিটোজেনিক খাদ্যাভ্যাস ব্যবহার করে, সম্পূর্ণ ভাবে ডায়বেটিস এর গতিকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে, ডায়বেটিসমুক্ত হয়েছেন। শুনে অসম্ভব মনে হলেও, বাস্তবতা হলও, ২য় ধরনের ডায়বেটিস কে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে বিদায় করা আসলে খুব সোজা। আমি এই দাবী করছি, কেননা আমার ক্লিনিকে আমি হরহামেশাই এই ঘটনা ঘটতে দেখছি।
আমার ক্লিনিকে আমি যে কিটো পদ্ধতি ব্যাবহার করি, তাতে রোগী অবশ্যই দিনে মোট ২০গ্রাম বা তার কম শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। (এত কঠিন নিয়ম কেন? কারণ টি২ডি এর গতি ঘুরিয়ে সুস্থ্য হাওয়া কোন ছেলেখেলা নয়!) রক্তের চিনির মাত্রা অনেক কারণেই বাড়তে পারে, কিন্তু আপনার খাদ্যাভ্যাসের প্রভাবই সব থেকে বেশী – বিশেষ করে কতটা শর্করা আপনি খান বা পান করেন। যা খেলে বা পান করলে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়বে, এমন খাবার বর্জন করার সাথে সাথেই আপনার রক্তের চিনির মাত্রা কমতে শুরু করবে ( সত্যি, কি অসম্ভব কথা, তাই না?)
কিছু কিছু লোকের ক্ষেত্রে রক্তের চিনির পরিমাণ এত দ্রুত কমে যে, তারা যে দিন থেকে কিটো ডায়েট শুরু করে সেদিন থেকেই আমি তাদের ইন্সুলিন ইনজেকশন নেওয়া নিষেধ করে দেই। (এই ঘটনা অবশ্য প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ঘটে না। সবসময় তোমার চিকিৎসকের সহায়তা নিয়ে ঔষধ পরিবর্তন করবে। নিজে নিজে কখনোই এ কাজ করবে না।) এমনকি ডায়বেটিসের অন্য যে রূপ, ১ম ধরনের ডায়বেটিস, যা ২য় ধরনের ডায়বেটিসের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন, সে ক্ষেত্রেও অনেক কম ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় যখন কেউ কিটোজেনিক অভ্যাস করে। (১ম ধরনের ডায়বেটিস রোগীদের প্রতিদিন, অতি অল্প হলেও, ইন্সুলিন নিতেই হয়; কিন্তু কিটো অভ্যাস করলে, তাদের ইন্সুলিন চাহিদা আর কমে যায়, যা শুধু পয়সাই বাচায় না, বরং রক্তে উচ্চ মাত্রার চিনি থেকে যে সমস্যাগুলো হয় এবং অতিরিক্ত ইন্সুলিন গ্রহণের যে সমস্যাগুলো হয়, তার থেকে তোমাকে বাঁচিয়ে দেবে।
তোমার টি২ডি থাকলে, তোমাকে এক গাদা ওষুধ খেতেই হবে এবং আরেক গাদা ওষুধ খেতে হবে প্রথম ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিষ্ক্রিয় করতে, এই অত্যন্ত ভুল ধারনা কে মন থেকে ঝেড়ে ফেলো। ডায়বেটিস থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর এর অত্যন্ত সহজ সমাধান হল, জীবন থেকে চিনি এবং শ্বেতসারকে জীবন থেকে বিদায় করা। ডায়বেটিস ক্রমাবনতিশীল নিরারোগ্য অসুখ তখনি যখন তুমি এর গতিরোধের জন্য কোন চেষ্টাই করছ না। আর তুমি যদি রসাল মাংশের স্টেক খেয়ে, পনির মেশানো অমলেট খেয়ে, রসুন আর জলপাই তেল ছিটানো ব্রকলি খেয়ে, ফুলকপির পিটসা খেয়ে বা অন্য কোন সুস্বাদু সীমিত শর্করা ভিত্তিক খাবার খেয়ে তোমার ডায়বেটিসের ক্রমাবনতি থামাতে এবং একদম সারিয়ে ফেলতে পারো, তাহলে কেন তা করবে না? আর সূচের খোঁচা খেতে হবে না, এক গাদা ওষুধও খেতে হবে না, বরং খাবে শুধু সুস্বাদু খাবার!
তোমার উদ্দেশ্যে পাঠানো এই ইমেইলে, আমি শুধু ২য় ধরনের ডায়বেটিসের নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু আরও কি কি অসুখ সেরে যেতে দেখেছি আমি কিটো অভ্যাসে তা জানতে চাও? বুক জ্বালাপোড়া, জোড়ায় জোড়ায় ব্যাথা, পি এম এস, মাইগ্রেন, ব্রণ, পি সি ও এস সহ আর অনেক অনেক অসুখ। (পি সি ও এস এর কথায় মনে পড়ল, কিটোজেনিক অভ্যাস নিয়ে আমার ডাক্তারি জীবনের প্রথম দিকে করা একটি গবেষণায় আমি দুইজন মহিলা কে আমার পছন্দের কিটো ডায়েট দিয়ে চিকিৎসা করার অল্প দিনের মধ্যেই তারা গর্ভবতী হয়ে পড়েন, যদিও এর আগে তারা টেস্টটিউব বেবি নেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। এমন অকল্পনীয় দ্রুততায় তাদের হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিলো।)
অনেকদিন ধরেই তুমি কোন অসুখে ভুগছ বলেই তোমাকে বাকী জীবনও ভুগতে হবে, এমন কোন কথা নেই। ওজন কমা ভালো, কিন্তু ২য় ধরনের ডায়বেটিস সেরে যাওয়া আরো ভালো। তার সাথে যদি গায়ে জোর বেড়ে যায় এবং হাঁটাচলা সহজ হয়, তাহলে কেমন হয়? আবার যদি বনপরিক্রমা বা নৌকা বাওয়া যায়? নিজের সন্তান বা নাতিনাতনি দের সাথে খেলার শক্তি ফিরে পাওয়া? ব্যাথা বিহীন চলাফেরা? এই নিশ্চয়তা দিতে পারব না যে আমার তৈরি কিটো অভ্যাস তোমাকে আবার শিশুর মত বানিয়ে দেবে, কিন্তু তুমি এমন ভালো অনুভব করবে যা হয়ত অনেক বছরে অনুভব করনি।
আমার পরবর্তী ইমেইলে আমি তোমাকে এমন একটি কিটো ধারনার কথা শেখাব যা স্বল্প সময় এবং অতি সহজে করা যায় এবং যা চমৎকার ফল দেবে। বিভিন্ন অ্যাপ, হিসাবের খাতা, ডাইরি ইত্যাদি ছেড়ে শুধু খাবার উপভোগ করতে চাও, তাহলে এদিকে চোখ রেখো।
কিটো নিয়ে আর সঠিক তথ্য শীঘ্রই আসছে!
তোমার সুস্বাস্থ্য কামনায়,
Eric Westman, MD
Medical Director
Adapt Your Life® Academy