পুষ্টিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক নিজ শিশু পুত্রকে যে খাবার দিতে শুরু করছেন

[ভূমিকাঃ আমাদের দেশে সাধারণের মধ্যে প্রচলিত ধারনা এই যে, ছয় মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে বিভিন্ন রকম বেবি ফর্মুলা ভিত্তিক খাবার দেওয়া উচিৎ। এই ধারনাকে আর জনপ্রিয় করার কাজে নিয়োজিত আছেন যারা এর থেকে ব্যবসায়িক সুবিধা ভোগ করছেন। যেমন যারা এই পণ্য গুলো উৎপাদন এবং বাজারজাত করছেন, এবং তাদের অনুসারী (দালাল বলতে পারেন) ডাক্তার, পুষ্টিবিদ ইত্যাদি। বাস্তবতা হল, বিজ্ঞান এই ধারনাকে সমর্থন করে না। প্রধানত শস্য (যেমন গম, ধান, ভুট্টা ইত্যাদি), চিনি এবং উদ্ভিজ্য তেল ব্যবহার করে উৎপাদিত এই পণ্য গুলোর অধিকাংশই শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।
এমন প্রেক্ষাপটে যে পুষ্টিবিদ ‘গাইডলাইন’ অনুসরণের পরিবর্তে নিজ শিশুকে প্রাকৃতিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর সাহস করেন এবং যুক্তি দিয়ে তার সিদ্ধান্তকে ব্যাখ্যা করতে পারেন, তার কথা শুনলে এবং বুঝলে, আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে কানামাছি খেলার অবসান হতে পারে, এই আশায়, পুষ্টিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক এর ফেসবুক পোস্ট আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।]

লিখেছেনঃ পুষ্টিবিদ আবু বকর সিদ্দিক ( https://www.facebook.com/mabsiddiq )

আমার মতে শিশুর বাড়তি খাবার কেমন হওয়া উচিতঃ

আমার সন্তানের বয়স আর ১০ দিন পর ১৮০ দিন পূর্ণ হবে। এইটা একটা ট্রানজিশনাল প্রিয়ড, যা শিশুর জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ন। গাইড লাইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের পর থেকে শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়িতি খাওয়ার দেয়া শুরু করা দরকার।

কেনো বাড়তি খাবার দিতে হবেঃ

৭ মাস বয়স থেকে শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য যে পরিমান ক্যালরি ও পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে আমিষ, আয়রণ, ভিটামিন এ সহ অন্যান্য অনুপুষ্টির দরকার তা শুধু মাত্র মাতৃ দুগ্ধের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব না। সেজন্য তার যথাযথ বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য পুষ্টির এই গ্যাপ বাড়তি খাবার দেয়ার মাধ্যমে পূরণ করাটা জরুরী।

বাড়তি খাওয়ার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা দরকারঃ

অনেকগুলো বিষয় আছে যা বাড়তি খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা দরকার। তার মধ্যে আমার কাছে কয়েকটা বিষয়কে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।

এর প্রথমটি হচ্ছে শিশুকে এমন খাবার দেয়া যা নিউট্রিয়েন্ট ও ক্যালরি ডেন্স, অর্থাৎ অল্প পরিমাণ খাবারের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক ক্যালরি, আমিষ ও অনুপুষ্টির যোগান দেয়া।

কেনো?

কারণ শিশুর পাকস্থলির আকার ছোট (৩০ মিলি/প্রতি কেজি BW) অর্থাৎ ৬ মাসের একটা শিশুর ওজন যদি ৮ কেজি হয় তাহলে তার পাকস্থলিতে খাবার আটবে ২৪০ মিলি লিটার। গাইডলাইন অনুযায়ী ৬-৮ মাস বয়সের একটি শিশুকে দিনে ১২৫ মিলি করে ২ বার খাবার দেয়া দরকার যার মাধ্যমে সে যেনো কমপক্ষে ২০০ কিলো ক্যালরি শক্তি পায়। তার মানে প্রতিবেলার ১২৫ মিলি খাবারের মাধ্যমে কমপক্ষে যেনো ১০০ কিলো ক্যালরি শক্তি পায়।

আমার কাছে ২য় বিষয়টা হচ্ছে পুষ্টিগুনের বিচারে খাবারের কোয়ালিটিঃ আমাদের দেশের শিশুদের অপুষ্টির একটা অন্যতম কারণ খাবারে আমিষের ঘাটতি। তাছাড়া সাথে আছে আয়রণ, ভিটামিন-এ, জিংক ও ভিটামিন-ডি এর অপর্যাপ্ততা। তাহলে শিশুর জন্য আমাদের এমন খাবার নির্বাচন করা দরকার যাতে ফার্স্ট ক্লাস আমিষ থাকে, সেই সাথে অধিক বায়ো এভেইলেবল ফর্মে ভিটামিন-এ, জিংক, ডি ও আয়রন।

৩য় বিষয়টা হচ্ছে খাবারটা ক্যালরি ডেন্স হতে হবে। অর্থাৎ অল্প খাবারে থেকে বেশী শক্তি পেতে হবে। আমরা যদি মাতৃদুগ্ধের কম্পোজিশনের দিকে খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাবো এর শতকরা ৪০-৫০% হচ্ছে ফ্যাট। কেনো? কারণ ১ গ্রাম ফ্যাট থেকে শর্করার প্রায় ২ গুণের বেশী ক্যালরি পাওয়া যায়। তার মানে ১০০ গ্রাম শর্করা খেলে যেই পরিমাণ শক্তি পাওয়া যাবে, ৪৫ গ্রাম ফ্যাট থেকে প্রায় সম পরিমাণ শক্তি পাওয়া সম্ভব।

৪র্থ বিষয় হচ্ছে হজম শক্তি। একজন শিশুর বিভিন্ন ধরনের খাবার হজমের জন্য দরকার বিভিন্ন রকমের এনজাইম। শিশু মাতৃদুগ্ধ খাওয়ার মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রানীজ আমিষ খাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। শিশুর ৪ মাস বয়স থেকে আমিষকে হজম করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পেপসিন সিক্রেশন শুরু হয়। পাশাপাশি ফ্যাট হজম করার জন্যও তার ডায়জেস্টিব সিস্টেম রেডি। এছাড়া সে দুধের শর্করা ল্যাকটোজ হজম করতে পারে। আমাদের একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, আর সেটা হচ্ছে আমাদের শিশু জন্মের পর থেকে শুধু মাত্র প্রানীজ খাদ্য (মাতৃদুগ্ধ) খেয়েই বড় হয়।

উপরিউক্ত বিষয় গুলো বিবেচনায় রেখে আমি আমার শিশুর বাড়তি খাওয়ার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে শুরুতে যেই খাবার গুলোকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করেছি তা হচ্ছেঃ

১। ডিমের কুসুম, মুরগির কলিজা, রেড মিট
২। আমিষ হজমের সুবিধার জন্য পাকা পেপে
৩। ঘরে তৈরি দই, হোয়ে প্রোটিন
৪। এভোকাডো, নারিকেল তেল, কেজিন ফ্রি ঘি
৫। গাজর, বিট, কলা, বেদানার রস, আমলকির রস, সজিনা পাতার পাউডার ভিটামিন সি এর জন্য আমি প্রেফার করি ভিটামিন সি পাউডার, পাশাপাশি ফার্মেন্টেড কড লিভার ওয়েল। তারপর ধীরে ধীরে সিরিয়াল, শাক-সবজি, বাদাম ইন্ট্রোডিউস করা।

এইগুলো সম্পূর্ণ আমার একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা ও মত। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী তার সন্তানের বাড়তি খাবারের যোগান দিবেন। (Kelloggs and Seventh-day Adventist Church হচ্ছে সিরিয়াল বেইজড, ভেজিটেরিয়ান পুষ্টির প্রবক্তা। আমার মতে আমাদের পুষ্টির অধিকাংশ গবেষণাগুলো নন বায়াসড নয়, এগুলোতে বিভিন্ন গোষ্ঠির কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট আছে)

ডাঃ এরিক ওয়েস্টম্যান এর ইমেইলঃ ফল খাওয়া নিয়ে ভুল ধারনা

রেফারেন্সঃ H4YVQK6S3Z79C

প্রিয় শাহাদাৎ, 

একটি কথা আমি প্রায়ই শুনে থাকি, আর তা হল…

“কিন্তু ফল খাওয়া খারাপ হয় কি করে?”

বিশেষ করে যারা কিটোজেনিক খাদ্যাভ্যাসে নতুন, তারা অনেকেই এই কথায় হোঁচট খান। আর হবে না-ই বা কেন? ফল কে সাধারণত আদর্শ স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে দাবী করা হয়, তাই না? 

অনেক ডাক্তারগণও তাদের ২য় ধরনের ডায়বেটিস রোগীদের বিশেষকরে ফল খেতে বলেন, অথচ আমি গত বিশ বছর ধরে আমার ক্লিনিকের রোগীদের যে খাদ্য তালিকা দিয়েছি, তার মধ্যে ফল নেই। বাস্তবে ফল খাওয়া থেকে বিরত থেকেও আমার রোগীরা শত শত পাউন্ড ওজন কমিয়েছেন, এবং তাদের পুরানো অনেক অসুখ সারিয়েছেন।

সার কথা যা তোমার জানা খুব দরকার, তা হলঃ

ফল – অন্য সব শর্করা জাতীয় খাবারের মতই – এমনি এমনি খারাপ নয়। কিন্তু যারা এমন অসুখে ভুগছেন, যার কারন হল রক্তে দীর্ঘ মেয়াদী উচ্চ মাত্রার চিনি, তাদের জন্য, অসুখের ক্ষতি কমিয়ে আনা, এবং এমন কি অসুখ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পাওয়ার জন্য সব থেকে কার্যকরী উপায় হচ্ছে, ফল সহ ‘সব’ রকমের শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া সীমিত করা।

প্রাকৃতিক ভাবে উচ্চ শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার গুলো ক্ষতিকর নয়। পৃথিবীময় কোটি কোটি সুস্থ্য এবং স্বাভাবিক ওজনের মানুষ কোন অসুবিধা ছাড়াই ফল খেতে পারেন। কিন্তু আমি আমার লেখা বই , End Your Carb Confusion, এ যেমন বলেছি যে, যদি ডায়বেটিস, ইন্সুলিন বধিরতা, বা বিপাক বিভ্রাট জনিত কারনে কেউ ইতিমধ্যে অসুস্থ্য হয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে কিছু খাবার যা অন্য লোকে কোন সমস্যা ছাড়াই খাচ্ছে, সেগুলো তাদের জন্য “বিপাকের দৃষ্টিকোণ থেকে নিরাপদ” নাও হতে পারে। 

যারা কিটো ডায়েট ব্যবহার করে ওজন কমিয়ে সুস্বাস্থ্য ফিরে পান, তারা একটা সময় পরে অল্প পরিমাণে ফল, যেমন বিভিন্ন রকমের জাম, এবং অন্যান্য স্বল্প চিনি ভিত্তিক ফল খেতে পারেন; কিন্তু বাস্তবতা হল, ফল খেতেই হবে, এমন কোন কথা নেই। ফল ছাড়াই নিখুঁত, স্বাস্থ্যকর এবং সার্বিকভাবে পুষ্টিকর খাদ্য অভ্যাস করা সম্ভব। ফল আমাদের এমন কিছু দেয় না যা আমরা সীমিত শর্করা ভিত্তিক খাবার যেমন মাংশ, সামুদ্রিক খাবার, ডিম, এবং সীমিত শর্করা সবজি থেকে পাই না। 

সুতরাং মনের মধ্যে এমন ভয় করার কোন কারণই নেই যে, ফল না খেয়ে তুমি নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছ, অথবা অত্যাবশ্যকীয় কোন পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছ। 

তোমার সুস্বাস্থ্য কামনায়, 

Eric Westman, MD

Medical Director

Adapt Your Life® Academy

PS: If you do not want to get REFRESHER/BASIC keto information, click HERE. You’ll remain on the mailing list, but we won’t send you this type of information again.

ডাঃ এরিক ওয়েস্টম্যান এর ইমেইলঃ ডায়বেটিস কোন অসুখই নয়!

রেফারেন্সঃ VDVUD7H62DAB7

প্রিয় শাহাদাৎ,

“ডায়বেটিস একটি ক্রমান্বয়ে খারাপ হাবারই অসুখ, আর কোন দিন সারবেও না” এমন কথা কি শুনেছ কারো কাছে?

কোন ভণিতা না করেই বলব যে এই কথা নিয়ে আমার দুটো আপত্তি আছেঃ (১) আমি মনে করি ডায়বেটিস কোন অসুখই নয়, এবং (২) এটা মোটেও ক্রমাবনতিশীল বা নিরারোগ্য অসুখ নয়।

ভাবছ, আমি আসলেই ২য় ধরনের ডায়বেটিস কে রোগ নয় বলে দাবী করলাম কিনা? হ্যাঁ, করেছি! আমি গত তিরিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে ডায়বেটিস এবং বিপাক নিয়ে গবেষণা করেছি। যখন ২য় ধরনের ডায়বেটিক রোগীর কোষের মধ্যে কি ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ করি, সেখানে অসুখ আক্রান্ত বা নষ্ট হয়ে যাওয়া কোন কিছু দেখতে পাই না। বরং সেখানে যা ঘটে, তা অতি স্বাভাবিক। আসলে, অতিরিক্ত চিনি খেয়ে আমাদের দেহ কে চাপের মধ্যে ফেলে দিলে, ঠিক এই ঘটনাই কাম্য।

আমাদের দেহ খানিকটা গ্লুকোজ আমাদের পেশী এবং কলিজায় গ্লাইকোজেন আকারে জমা রাখতে পারে, কিন্তু সে জায়গা পূর্ণ হয়ে গেলে যখন তারা আর নিতে পারে না, তখন আমাদের খাওয়া উদ্বৃত্ত শর্করাকে দেহ চর্বিতে রূপান্তর করে জমা করে, কেননা গ্লুকোজ এর তুলনায় অনেক গুন বেশী চর্বি মানবদেহ জমিয়ে রাখতে পারে (আমাদের অনেকেই দেহের চর্বি ধরে রাখার বিষয়টি খুব নীবিড় ভাবে জানেন) কিন্তু এক সময় চর্বি ধারণ ক্ষমতাও পূর্ণ হয়ে যায়, আর যখন চর্বি রাখার আর জায়গা থাকে না, তখন যে শর্করা তুমি খেয়েছ, তার আর যাবার জায়গা থাকে না, ফলে গ্লুকোজ রক্তে ঘুরে বেরাতে থাকে। এই জন্যই ২য় ধরনের ডায়বেটিস কে সব সময় রোগীর রক্তে উচ্চ মাত্রায় চিনির উপস্থিতি দিয়ে সনাক্ত করা হয়।

আচ্ছা, ২য় ধরনের ডায়বেটিস ক্রমাবনতিশীল বা অনারোগ্য অসুখ – আমি এই দাবী করছি কেন? এই কথার জবাবে তোমাকে আমার মুখের কথায় বিশ্বাস করতে হবে না। হাজার হাজার মানুষ শুধু যে ডায়বেটিসের ক্রমাবনতি থামিয়ে দিয়েছে, তাই নয়; বরং কিটোজেনিক খাদ্যাভ্যাস ব্যবহার করে, সম্পূর্ণ ভাবে ডায়বেটিস এর গতিকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে, ডায়বেটিসমুক্ত হয়েছেন। শুনে অসম্ভব মনে হলেও, বাস্তবতা হলও, ২য় ধরনের ডায়বেটিস কে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে বিদায় করা আসলে খুব সোজা। আমি এই দাবী করছি, কেননা আমার ক্লিনিকে আমি হরহামেশাই এই ঘটনা ঘটতে দেখছি।

​আমার ক্লিনিকে আমি যে কিটো পদ্ধতি ব্যাবহার করি, তাতে রোগী অবশ্যই দিনে মোট ২০গ্রাম বা তার কম শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। (এত কঠিন নিয়ম কেন? কারণ টি২ডি এর গতি ঘুরিয়ে সুস্থ্য হাওয়া কোন ছেলেখেলা নয়!) রক্তের চিনির মাত্রা অনেক কারণেই বাড়তে পারে, কিন্তু আপনার খাদ্যাভ্যাসের প্রভাবই সব থেকে বেশী – বিশেষ করে কতটা শর্করা আপনি খান বা পান করেন। যা খেলে বা পান করলে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়বে, এমন খাবার বর্জন করার সাথে সাথেই আপনার রক্তের চিনির মাত্রা কমতে শুরু করবে ( সত্যি, কি অসম্ভব কথা, তাই না?)

​কিছু কিছু লোকের ক্ষেত্রে রক্তের চিনির পরিমাণ এত দ্রুত কমে যে, তারা যে দিন থেকে কিটো ডায়েট শুরু করে সেদিন থেকেই আমি তাদের ইন্সুলিন ইনজেকশন নেওয়া নিষেধ করে দেই। (এই ঘটনা অবশ্য প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ঘটে না। সবসময় তোমার চিকিৎসকের সহায়তা নিয়ে ঔষধ পরিবর্তন করবে। নিজে নিজে কখনোই এ কাজ করবে না।) এমনকি ডায়বেটিসের অন্য যে রূপ, ১ম ধরনের ডায়বেটিস, যা ২য় ধরনের ডায়বেটিসের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন, সে ক্ষেত্রেও অনেক কম ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় যখন কেউ কিটোজেনিক অভ্যাস করে। (১ম ধরনের ডায়বেটিস রোগীদের প্রতিদিন, অতি অল্প হলেও, ইন্সুলিন নিতেই হয়; কিন্তু কিটো অভ্যাস করলে, তাদের ইন্সুলিন চাহিদা আর কমে যায়, যা শুধু পয়সাই বাচায় না, বরং রক্তে উচ্চ মাত্রার চিনি থেকে যে সমস্যাগুলো হয় এবং অতিরিক্ত ইন্সুলিন গ্রহণের যে সমস্যাগুলো হয়, তার থেকে তোমাকে বাঁচিয়ে দেবে।

তোমার টি২ডি থাকলে, তোমাকে এক গাদা ওষুধ খেতেই হবে এবং আরেক গাদা ওষুধ খেতে হবে প্রথম ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিষ্ক্রিয় করতে, এই অত্যন্ত ভুল ধারনা কে মন থেকে ঝেড়ে ফেলো। ডায়বেটিস থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর এর অত্যন্ত সহজ সমাধান হল, জীবন থেকে চিনি এবং শ্বেতসারকে জীবন থেকে বিদায় করা। ডায়বেটিস ক্রমাবনতিশীল নিরারোগ্য অসুখ তখনি যখন তুমি এর গতিরোধের জন্য কোন চেষ্টাই করছ না। আর তুমি যদি রসাল মাংশের স্টেক খেয়ে, পনির মেশানো অমলেট খেয়ে, রসুন আর জলপাই তেল ছিটানো ব্রকলি খেয়ে, ফুলকপির পিটসা খেয়ে বা অন্য কোন সুস্বাদু সীমিত শর্করা ভিত্তিক খাবার খেয়ে তোমার ডায়বেটিসের ক্রমাবনতি থামাতে এবং একদম সারিয়ে ফেলতে পারো, তাহলে কেন তা করবে না? আর সূচের খোঁচা খেতে হবে না, এক গাদা ওষুধও খেতে হবে না, বরং খাবে শুধু সুস্বাদু খাবার!

​তোমার উদ্দেশ্যে পাঠানো এই ইমেইলে, আমি শুধু ২য় ধরনের ডায়বেটিসের নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু আরও কি কি অসুখ সেরে যেতে দেখেছি আমি কিটো অভ্যাসে তা জানতে চাও? বুক জ্বালাপোড়া, জোড়ায় জোড়ায় ব্যাথা, পি এম এস, মাইগ্রেন, ব্রণ, পি সি ও এস সহ আর অনেক অনেক অসুখ। (পি সি ও এস এর কথায় মনে পড়ল, কিটোজেনিক অভ্যাস নিয়ে আমার ডাক্তারি জীবনের প্রথম দিকে করা একটি গবেষণায় আমি দুইজন মহিলা কে আমার পছন্দের কিটো ডায়েট দিয়ে চিকিৎসা করার অল্প দিনের মধ্যেই তারা গর্ভবতী হয়ে পড়েন, যদিও এর আগে তারা টেস্টটিউব বেবি নেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। এমন অকল্পনীয় দ্রুততায় তাদের হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিলো।)

অনেকদিন ধরেই তুমি কোন অসুখে ভুগছ বলেই তোমাকে বাকী জীবনও ভুগতে হবে, এমন কোন কথা নেই। ওজন কমা ভালো, কিন্তু ২য় ধরনের ডায়বেটিস সেরে যাওয়া আরো ভালো। তার সাথে যদি গায়ে জোর বেড়ে যায় এবং হাঁটাচলা সহজ হয়, তাহলে কেমন হয়? আবার যদি বনপরিক্রমা বা নৌকা বাওয়া যায়? নিজের সন্তান বা নাতিনাতনি দের সাথে খেলার শক্তি ফিরে পাওয়া? ব্যাথা বিহীন চলাফেরা? এই নিশ্চয়তা দিতে পারব না যে আমার তৈরি কিটো অভ্যাস তোমাকে আবার শিশুর মত বানিয়ে দেবে, কিন্তু তুমি এমন ভালো অনুভব করবে যা হয়ত অনেক বছরে অনুভব করনি। ​

​আমার পরবর্তী ইমেইলে আমি তোমাকে এমন একটি কিটো ধারনার কথা শেখাব যা স্বল্প সময় এবং অতি সহজে করা যায় এবং যা চমৎকার ফল দেবে। বিভিন্ন অ্যাপ, হিসাবের খাতা, ডাইরি ইত্যাদি ছেড়ে শুধু খাবার উপভোগ করতে চাও, তাহলে এদিকে চোখ রেখো।

​কিটো নিয়ে আর সঠিক তথ্য শীঘ্রই আসছে!

​তোমার সুস্বাস্থ্য কামনায়,

Eric Westman, MD

Medical Director

Adapt Your Life® Academy