পুষ্টিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক নিজ শিশু পুত্রকে যে খাবার দিতে শুরু করছেন

[ভূমিকাঃ আমাদের দেশে সাধারণের মধ্যে প্রচলিত ধারনা এই যে, ছয় মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে বিভিন্ন রকম বেবি ফর্মুলা ভিত্তিক খাবার দেওয়া উচিৎ। এই ধারনাকে আর জনপ্রিয় করার কাজে নিয়োজিত আছেন যারা এর থেকে ব্যবসায়িক সুবিধা ভোগ করছেন। যেমন যারা এই পণ্য গুলো উৎপাদন এবং বাজারজাত করছেন, এবং তাদের অনুসারী (দালাল বলতে পারেন) ডাক্তার, পুষ্টিবিদ ইত্যাদি। বাস্তবতা হল, বিজ্ঞান এই ধারনাকে সমর্থন করে না। প্রধানত শস্য (যেমন গম, ধান, ভুট্টা ইত্যাদি), চিনি এবং উদ্ভিজ্য তেল ব্যবহার করে উৎপাদিত এই পণ্য গুলোর অধিকাংশই শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।
এমন প্রেক্ষাপটে যে পুষ্টিবিদ ‘গাইডলাইন’ অনুসরণের পরিবর্তে নিজ শিশুকে প্রাকৃতিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর সাহস করেন এবং যুক্তি দিয়ে তার সিদ্ধান্তকে ব্যাখ্যা করতে পারেন, তার কথা শুনলে এবং বুঝলে, আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে কানামাছি খেলার অবসান হতে পারে, এই আশায়, পুষ্টিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক এর ফেসবুক পোস্ট আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।]

লিখেছেনঃ পুষ্টিবিদ আবু বকর সিদ্দিক ( https://www.facebook.com/mabsiddiq )

আমার মতে শিশুর বাড়তি খাবার কেমন হওয়া উচিতঃ

আমার সন্তানের বয়স আর ১০ দিন পর ১৮০ দিন পূর্ণ হবে। এইটা একটা ট্রানজিশনাল প্রিয়ড, যা শিশুর জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ন। গাইড লাইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের পর থেকে শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়িতি খাওয়ার দেয়া শুরু করা দরকার।

কেনো বাড়তি খাবার দিতে হবেঃ

৭ মাস বয়স থেকে শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য যে পরিমান ক্যালরি ও পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে আমিষ, আয়রণ, ভিটামিন এ সহ অন্যান্য অনুপুষ্টির দরকার তা শুধু মাত্র মাতৃ দুগ্ধের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব না। সেজন্য তার যথাযথ বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য পুষ্টির এই গ্যাপ বাড়তি খাবার দেয়ার মাধ্যমে পূরণ করাটা জরুরী।

বাড়তি খাওয়ার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা দরকারঃ

অনেকগুলো বিষয় আছে যা বাড়তি খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা দরকার। তার মধ্যে আমার কাছে কয়েকটা বিষয়কে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।

এর প্রথমটি হচ্ছে শিশুকে এমন খাবার দেয়া যা নিউট্রিয়েন্ট ও ক্যালরি ডেন্স, অর্থাৎ অল্প পরিমাণ খাবারের মাধ্যমে অধিক সংখ্যক ক্যালরি, আমিষ ও অনুপুষ্টির যোগান দেয়া।

কেনো?

কারণ শিশুর পাকস্থলির আকার ছোট (৩০ মিলি/প্রতি কেজি BW) অর্থাৎ ৬ মাসের একটা শিশুর ওজন যদি ৮ কেজি হয় তাহলে তার পাকস্থলিতে খাবার আটবে ২৪০ মিলি লিটার। গাইডলাইন অনুযায়ী ৬-৮ মাস বয়সের একটি শিশুকে দিনে ১২৫ মিলি করে ২ বার খাবার দেয়া দরকার যার মাধ্যমে সে যেনো কমপক্ষে ২০০ কিলো ক্যালরি শক্তি পায়। তার মানে প্রতিবেলার ১২৫ মিলি খাবারের মাধ্যমে কমপক্ষে যেনো ১০০ কিলো ক্যালরি শক্তি পায়।

আমার কাছে ২য় বিষয়টা হচ্ছে পুষ্টিগুনের বিচারে খাবারের কোয়ালিটিঃ আমাদের দেশের শিশুদের অপুষ্টির একটা অন্যতম কারণ খাবারে আমিষের ঘাটতি। তাছাড়া সাথে আছে আয়রণ, ভিটামিন-এ, জিংক ও ভিটামিন-ডি এর অপর্যাপ্ততা। তাহলে শিশুর জন্য আমাদের এমন খাবার নির্বাচন করা দরকার যাতে ফার্স্ট ক্লাস আমিষ থাকে, সেই সাথে অধিক বায়ো এভেইলেবল ফর্মে ভিটামিন-এ, জিংক, ডি ও আয়রন।

৩য় বিষয়টা হচ্ছে খাবারটা ক্যালরি ডেন্স হতে হবে। অর্থাৎ অল্প খাবারে থেকে বেশী শক্তি পেতে হবে। আমরা যদি মাতৃদুগ্ধের কম্পোজিশনের দিকে খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাবো এর শতকরা ৪০-৫০% হচ্ছে ফ্যাট। কেনো? কারণ ১ গ্রাম ফ্যাট থেকে শর্করার প্রায় ২ গুণের বেশী ক্যালরি পাওয়া যায়। তার মানে ১০০ গ্রাম শর্করা খেলে যেই পরিমাণ শক্তি পাওয়া যাবে, ৪৫ গ্রাম ফ্যাট থেকে প্রায় সম পরিমাণ শক্তি পাওয়া সম্ভব।

৪র্থ বিষয় হচ্ছে হজম শক্তি। একজন শিশুর বিভিন্ন ধরনের খাবার হজমের জন্য দরকার বিভিন্ন রকমের এনজাইম। শিশু মাতৃদুগ্ধ খাওয়ার মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রানীজ আমিষ খাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। শিশুর ৪ মাস বয়স থেকে আমিষকে হজম করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পেপসিন সিক্রেশন শুরু হয়। পাশাপাশি ফ্যাট হজম করার জন্যও তার ডায়জেস্টিব সিস্টেম রেডি। এছাড়া সে দুধের শর্করা ল্যাকটোজ হজম করতে পারে। আমাদের একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, আর সেটা হচ্ছে আমাদের শিশু জন্মের পর থেকে শুধু মাত্র প্রানীজ খাদ্য (মাতৃদুগ্ধ) খেয়েই বড় হয়।

উপরিউক্ত বিষয় গুলো বিবেচনায় রেখে আমি আমার শিশুর বাড়তি খাওয়ার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে শুরুতে যেই খাবার গুলোকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করেছি তা হচ্ছেঃ

১। ডিমের কুসুম, মুরগির কলিজা, রেড মিট
২। আমিষ হজমের সুবিধার জন্য পাকা পেপে
৩। ঘরে তৈরি দই, হোয়ে প্রোটিন
৪। এভোকাডো, নারিকেল তেল, কেজিন ফ্রি ঘি
৫। গাজর, বিট, কলা, বেদানার রস, আমলকির রস, সজিনা পাতার পাউডার ভিটামিন সি এর জন্য আমি প্রেফার করি ভিটামিন সি পাউডার, পাশাপাশি ফার্মেন্টেড কড লিভার ওয়েল। তারপর ধীরে ধীরে সিরিয়াল, শাক-সবজি, বাদাম ইন্ট্রোডিউস করা।

এইগুলো সম্পূর্ণ আমার একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা ও মত। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী তার সন্তানের বাড়তি খাবারের যোগান দিবেন। (Kelloggs and Seventh-day Adventist Church হচ্ছে সিরিয়াল বেইজড, ভেজিটেরিয়ান পুষ্টির প্রবক্তা। আমার মতে আমাদের পুষ্টির অধিকাংশ গবেষণাগুলো নন বায়াসড নয়, এগুলোতে বিভিন্ন গোষ্ঠির কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট আছে)

ডাঃ এরিক ওয়েস্টম্যান এর ইমেইলঃ ফল খাওয়া নিয়ে ভুল ধারনা

রেফারেন্সঃ H4YVQK6S3Z79C

প্রিয় শাহাদাৎ, 

একটি কথা আমি প্রায়ই শুনে থাকি, আর তা হল…

“কিন্তু ফল খাওয়া খারাপ হয় কি করে?”

বিশেষ করে যারা কিটোজেনিক খাদ্যাভ্যাসে নতুন, তারা অনেকেই এই কথায় হোঁচট খান। আর হবে না-ই বা কেন? ফল কে সাধারণত আদর্শ স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে দাবী করা হয়, তাই না? 

অনেক ডাক্তারগণও তাদের ২য় ধরনের ডায়বেটিস রোগীদের বিশেষকরে ফল খেতে বলেন, অথচ আমি গত বিশ বছর ধরে আমার ক্লিনিকের রোগীদের যে খাদ্য তালিকা দিয়েছি, তার মধ্যে ফল নেই। বাস্তবে ফল খাওয়া থেকে বিরত থেকেও আমার রোগীরা শত শত পাউন্ড ওজন কমিয়েছেন, এবং তাদের পুরানো অনেক অসুখ সারিয়েছেন।

সার কথা যা তোমার জানা খুব দরকার, তা হলঃ

ফল – অন্য সব শর্করা জাতীয় খাবারের মতই – এমনি এমনি খারাপ নয়। কিন্তু যারা এমন অসুখে ভুগছেন, যার কারন হল রক্তে দীর্ঘ মেয়াদী উচ্চ মাত্রার চিনি, তাদের জন্য, অসুখের ক্ষতি কমিয়ে আনা, এবং এমন কি অসুখ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পাওয়ার জন্য সব থেকে কার্যকরী উপায় হচ্ছে, ফল সহ ‘সব’ রকমের শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া সীমিত করা।

প্রাকৃতিক ভাবে উচ্চ শ্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার গুলো ক্ষতিকর নয়। পৃথিবীময় কোটি কোটি সুস্থ্য এবং স্বাভাবিক ওজনের মানুষ কোন অসুবিধা ছাড়াই ফল খেতে পারেন। কিন্তু আমি আমার লেখা বই , End Your Carb Confusion, এ যেমন বলেছি যে, যদি ডায়বেটিস, ইন্সুলিন বধিরতা, বা বিপাক বিভ্রাট জনিত কারনে কেউ ইতিমধ্যে অসুস্থ্য হয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে কিছু খাবার যা অন্য লোকে কোন সমস্যা ছাড়াই খাচ্ছে, সেগুলো তাদের জন্য “বিপাকের দৃষ্টিকোণ থেকে নিরাপদ” নাও হতে পারে। 

যারা কিটো ডায়েট ব্যবহার করে ওজন কমিয়ে সুস্বাস্থ্য ফিরে পান, তারা একটা সময় পরে অল্প পরিমাণে ফল, যেমন বিভিন্ন রকমের জাম, এবং অন্যান্য স্বল্প চিনি ভিত্তিক ফল খেতে পারেন; কিন্তু বাস্তবতা হল, ফল খেতেই হবে, এমন কোন কথা নেই। ফল ছাড়াই নিখুঁত, স্বাস্থ্যকর এবং সার্বিকভাবে পুষ্টিকর খাদ্য অভ্যাস করা সম্ভব। ফল আমাদের এমন কিছু দেয় না যা আমরা সীমিত শর্করা ভিত্তিক খাবার যেমন মাংশ, সামুদ্রিক খাবার, ডিম, এবং সীমিত শর্করা সবজি থেকে পাই না। 

সুতরাং মনের মধ্যে এমন ভয় করার কোন কারণই নেই যে, ফল না খেয়ে তুমি নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছ, অথবা অত্যাবশ্যকীয় কোন পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছ। 

তোমার সুস্বাস্থ্য কামনায়, 

Eric Westman, MD

Medical Director

Adapt Your Life® Academy

PS: If you do not want to get REFRESHER/BASIC keto information, click HERE. You’ll remain on the mailing list, but we won’t send you this type of information again.

ডাঃ এরিক ওয়েস্টম্যান এর ইমেইলঃ ডায়বেটিস কোন অসুখই নয়!

রেফারেন্সঃ VDVUD7H62DAB7

প্রিয় শাহাদাৎ,

“ডায়বেটিস একটি ক্রমান্বয়ে খারাপ হাবারই অসুখ, আর কোন দিন সারবেও না” এমন কথা কি শুনেছ কারো কাছে?

কোন ভণিতা না করেই বলব যে এই কথা নিয়ে আমার দুটো আপত্তি আছেঃ (১) আমি মনে করি ডায়বেটিস কোন অসুখই নয়, এবং (২) এটা মোটেও ক্রমাবনতিশীল বা নিরারোগ্য অসুখ নয়।

ভাবছ, আমি আসলেই ২য় ধরনের ডায়বেটিস কে রোগ নয় বলে দাবী করলাম কিনা? হ্যাঁ, করেছি! আমি গত তিরিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে ডায়বেটিস এবং বিপাক নিয়ে গবেষণা করেছি। যখন ২য় ধরনের ডায়বেটিক রোগীর কোষের মধ্যে কি ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ করি, সেখানে অসুখ আক্রান্ত বা নষ্ট হয়ে যাওয়া কোন কিছু দেখতে পাই না। বরং সেখানে যা ঘটে, তা অতি স্বাভাবিক। আসলে, অতিরিক্ত চিনি খেয়ে আমাদের দেহ কে চাপের মধ্যে ফেলে দিলে, ঠিক এই ঘটনাই কাম্য।

আমাদের দেহ খানিকটা গ্লুকোজ আমাদের পেশী এবং কলিজায় গ্লাইকোজেন আকারে জমা রাখতে পারে, কিন্তু সে জায়গা পূর্ণ হয়ে গেলে যখন তারা আর নিতে পারে না, তখন আমাদের খাওয়া উদ্বৃত্ত শর্করাকে দেহ চর্বিতে রূপান্তর করে জমা করে, কেননা গ্লুকোজ এর তুলনায় অনেক গুন বেশী চর্বি মানবদেহ জমিয়ে রাখতে পারে (আমাদের অনেকেই দেহের চর্বি ধরে রাখার বিষয়টি খুব নীবিড় ভাবে জানেন) কিন্তু এক সময় চর্বি ধারণ ক্ষমতাও পূর্ণ হয়ে যায়, আর যখন চর্বি রাখার আর জায়গা থাকে না, তখন যে শর্করা তুমি খেয়েছ, তার আর যাবার জায়গা থাকে না, ফলে গ্লুকোজ রক্তে ঘুরে বেরাতে থাকে। এই জন্যই ২য় ধরনের ডায়বেটিস কে সব সময় রোগীর রক্তে উচ্চ মাত্রায় চিনির উপস্থিতি দিয়ে সনাক্ত করা হয়।

আচ্ছা, ২য় ধরনের ডায়বেটিস ক্রমাবনতিশীল বা অনারোগ্য অসুখ – আমি এই দাবী করছি কেন? এই কথার জবাবে তোমাকে আমার মুখের কথায় বিশ্বাস করতে হবে না। হাজার হাজার মানুষ শুধু যে ডায়বেটিসের ক্রমাবনতি থামিয়ে দিয়েছে, তাই নয়; বরং কিটোজেনিক খাদ্যাভ্যাস ব্যবহার করে, সম্পূর্ণ ভাবে ডায়বেটিস এর গতিকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে, ডায়বেটিসমুক্ত হয়েছেন। শুনে অসম্ভব মনে হলেও, বাস্তবতা হলও, ২য় ধরনের ডায়বেটিস কে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে বিদায় করা আসলে খুব সোজা। আমি এই দাবী করছি, কেননা আমার ক্লিনিকে আমি হরহামেশাই এই ঘটনা ঘটতে দেখছি।

​আমার ক্লিনিকে আমি যে কিটো পদ্ধতি ব্যাবহার করি, তাতে রোগী অবশ্যই দিনে মোট ২০গ্রাম বা তার কম শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। (এত কঠিন নিয়ম কেন? কারণ টি২ডি এর গতি ঘুরিয়ে সুস্থ্য হাওয়া কোন ছেলেখেলা নয়!) রক্তের চিনির মাত্রা অনেক কারণেই বাড়তে পারে, কিন্তু আপনার খাদ্যাভ্যাসের প্রভাবই সব থেকে বেশী – বিশেষ করে কতটা শর্করা আপনি খান বা পান করেন। যা খেলে বা পান করলে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়বে, এমন খাবার বর্জন করার সাথে সাথেই আপনার রক্তের চিনির মাত্রা কমতে শুরু করবে ( সত্যি, কি অসম্ভব কথা, তাই না?)

​কিছু কিছু লোকের ক্ষেত্রে রক্তের চিনির পরিমাণ এত দ্রুত কমে যে, তারা যে দিন থেকে কিটো ডায়েট শুরু করে সেদিন থেকেই আমি তাদের ইন্সুলিন ইনজেকশন নেওয়া নিষেধ করে দেই। (এই ঘটনা অবশ্য প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ঘটে না। সবসময় তোমার চিকিৎসকের সহায়তা নিয়ে ঔষধ পরিবর্তন করবে। নিজে নিজে কখনোই এ কাজ করবে না।) এমনকি ডায়বেটিসের অন্য যে রূপ, ১ম ধরনের ডায়বেটিস, যা ২য় ধরনের ডায়বেটিসের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন, সে ক্ষেত্রেও অনেক কম ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় যখন কেউ কিটোজেনিক অভ্যাস করে। (১ম ধরনের ডায়বেটিস রোগীদের প্রতিদিন, অতি অল্প হলেও, ইন্সুলিন নিতেই হয়; কিন্তু কিটো অভ্যাস করলে, তাদের ইন্সুলিন চাহিদা আর কমে যায়, যা শুধু পয়সাই বাচায় না, বরং রক্তে উচ্চ মাত্রার চিনি থেকে যে সমস্যাগুলো হয় এবং অতিরিক্ত ইন্সুলিন গ্রহণের যে সমস্যাগুলো হয়, তার থেকে তোমাকে বাঁচিয়ে দেবে।

তোমার টি২ডি থাকলে, তোমাকে এক গাদা ওষুধ খেতেই হবে এবং আরেক গাদা ওষুধ খেতে হবে প্রথম ওষুধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিষ্ক্রিয় করতে, এই অত্যন্ত ভুল ধারনা কে মন থেকে ঝেড়ে ফেলো। ডায়বেটিস থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর এর অত্যন্ত সহজ সমাধান হল, জীবন থেকে চিনি এবং শ্বেতসারকে জীবন থেকে বিদায় করা। ডায়বেটিস ক্রমাবনতিশীল নিরারোগ্য অসুখ তখনি যখন তুমি এর গতিরোধের জন্য কোন চেষ্টাই করছ না। আর তুমি যদি রসাল মাংশের স্টেক খেয়ে, পনির মেশানো অমলেট খেয়ে, রসুন আর জলপাই তেল ছিটানো ব্রকলি খেয়ে, ফুলকপির পিটসা খেয়ে বা অন্য কোন সুস্বাদু সীমিত শর্করা ভিত্তিক খাবার খেয়ে তোমার ডায়বেটিসের ক্রমাবনতি থামাতে এবং একদম সারিয়ে ফেলতে পারো, তাহলে কেন তা করবে না? আর সূচের খোঁচা খেতে হবে না, এক গাদা ওষুধও খেতে হবে না, বরং খাবে শুধু সুস্বাদু খাবার!

​তোমার উদ্দেশ্যে পাঠানো এই ইমেইলে, আমি শুধু ২য় ধরনের ডায়বেটিসের নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু আরও কি কি অসুখ সেরে যেতে দেখেছি আমি কিটো অভ্যাসে তা জানতে চাও? বুক জ্বালাপোড়া, জোড়ায় জোড়ায় ব্যাথা, পি এম এস, মাইগ্রেন, ব্রণ, পি সি ও এস সহ আর অনেক অনেক অসুখ। (পি সি ও এস এর কথায় মনে পড়ল, কিটোজেনিক অভ্যাস নিয়ে আমার ডাক্তারি জীবনের প্রথম দিকে করা একটি গবেষণায় আমি দুইজন মহিলা কে আমার পছন্দের কিটো ডায়েট দিয়ে চিকিৎসা করার অল্প দিনের মধ্যেই তারা গর্ভবতী হয়ে পড়েন, যদিও এর আগে তারা টেস্টটিউব বেবি নেবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। এমন অকল্পনীয় দ্রুততায় তাদের হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিলো।)

অনেকদিন ধরেই তুমি কোন অসুখে ভুগছ বলেই তোমাকে বাকী জীবনও ভুগতে হবে, এমন কোন কথা নেই। ওজন কমা ভালো, কিন্তু ২য় ধরনের ডায়বেটিস সেরে যাওয়া আরো ভালো। তার সাথে যদি গায়ে জোর বেড়ে যায় এবং হাঁটাচলা সহজ হয়, তাহলে কেমন হয়? আবার যদি বনপরিক্রমা বা নৌকা বাওয়া যায়? নিজের সন্তান বা নাতিনাতনি দের সাথে খেলার শক্তি ফিরে পাওয়া? ব্যাথা বিহীন চলাফেরা? এই নিশ্চয়তা দিতে পারব না যে আমার তৈরি কিটো অভ্যাস তোমাকে আবার শিশুর মত বানিয়ে দেবে, কিন্তু তুমি এমন ভালো অনুভব করবে যা হয়ত অনেক বছরে অনুভব করনি। ​

​আমার পরবর্তী ইমেইলে আমি তোমাকে এমন একটি কিটো ধারনার কথা শেখাব যা স্বল্প সময় এবং অতি সহজে করা যায় এবং যা চমৎকার ফল দেবে। বিভিন্ন অ্যাপ, হিসাবের খাতা, ডাইরি ইত্যাদি ছেড়ে শুধু খাবার উপভোগ করতে চাও, তাহলে এদিকে চোখ রেখো।

​কিটো নিয়ে আর সঠিক তথ্য শীঘ্রই আসছে!

​তোমার সুস্বাস্থ্য কামনায়,

Eric Westman, MD

Medical Director

Adapt Your Life® Academy

চাল খাওয়ার বিপদ

লিখেছেনঃ পুষ্টিবিদ আবু বকর সিদ্দিক ( https://www.facebook.com/mabsiddiq )

প্রতিবেলার খাবারে আমাদের ভাত না হলে চলেই না। কিন্তু চালের একটা বিপদ হচ্ছে আর্সেনিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি। আমাদের দেশের প্রায় অনেক অঞ্চলে আর্সেনিক এর তীব্র প্রকোপ দেখা যায়, ফলে সেই এলাকার ফল, ফসলেও পাওয়া যায় আর্সেনিকের উপস্থিতি। এ থেকে বাচার কি কোন উপায় আছে, সে বিষয়ে খুজতে গিয়ে দারুন কিছু তথ্য পেলাম। সামনে আমার ছেলে মুহাম্মাদ কে বাড়তি খাবার দেয়া শুরু করতে হবে। তাই তার জন্য খুজছিলাম সবচেয়ে নিরাপদ চাল।

Rice 101: Nutrition facts and health effects

জানতে পারলাম, সাধারণত সুগন্ধি চালে তুলনামূলক আর্সেনিক কম থাকে। কেউ যদি সাধারণ চালের পরিবর্তে সুগন্ধি চাল খায় তাহলে তার প্রতিদিন আর্সেনিক গ্রহণের হার ৪৮%-৬৯% পর্যন্ত কমে আসবে।

আরেকটা মজার বিষয় জানলাম। যেসব চালে আর্সেনিক বেশী থাকে সেসব চালে জিংক ও সেলেনিয়াম কম থাকে। এক্ষেত্রে কেউ যদি সুগন্ধি চাল খায় তাহলে তার প্রতিদিনকার সেলেনিয়ামের চাহিদার ৪৬% পূরণ হয়ে যাবে আর জিংক এর চাহিদার পূরণ হবে ২৩ শতাংশ।

তবে সুগন্ধি চালের ক্ষেত্রেও অঞ্চলভেদে আর্সেনিক, সেলেনিয়াম ও জিংকের উপস্থিতির তারতাম্য দেখা যায়।

এই বিবেচনায় সামনে একদিন কোন এলাকার চাল এবং কি ধরনের চাল সেরা তা নিয়ে লিখবো।

যে গবেষণার উপর ভিত্তি করে এই লেখাটি লেখা হয়েছে।

স্ট্যাটিন খাওয়ার আগে ৩৩বার ভাববেন এই লেখা পড়ার পরে

উৎসঃ ডাঃ পল মেসনের উপস্থাপনা https://youtu.be/Odvt4EaGPLw

ভিডিওটির ধারা বর্ণনা বাংলায় অনুবাদ করেছেন, মোঃ শাহাদাৎ হোসেন (simplyShahadat@gmail.com)।

শুভেচ্ছা সকলকে! আমি ডাঃ পল মেসন। আজ আমি আপনাদের স্টাটিন ঔষধের ইতিহাস সম্পর্কে বলব এবং দেখাব কেমন করে বিজ্ঞান কে কলুষিত করা হয়েছে।

সারা পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষ স্টাটিন ব্যবহার করেন। এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ঔষধ এবং ‘লিপিটর’ যেটা এই চিত্রে নিচের বাম কোনায় দেখতে পাচ্ছেন, সেটি বছরে ১৫০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারেরও বেশী বিক্রি হয়। তাহলে প্রথম প্রশ্ন হল, স্টাটিন এত জনপ্রিয় হল কি করে?

এই গল্পের শুরু হয় ১৯১৩ সালে, এই ব্যক্তিকে দিয়ে। তিনি রাশিয়ান একজন বিজ্ঞানী যার নাম নিকলেই আনাকভ।

তিনি খরগোশদের জোর করে শুধুই খাঁটি কোলেস্টেরল খাওয়ান এবং  তাদের মধ্যে এথেরস্ক্লেরসিস ঘটাতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে তার এই আবিষ্কারই চর্বি-হৃদরোগ তত্বের জন্ম দেয়। এই তত্বের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে যে খাদ্যের সম্পৃক্ত চর্বি এবং কোলেস্টেরলই হৃদরোগের কারন। কোলেস্টেরল যে তৃণভোজী খরগোশের খাবার নয় এবং এদের এথেরস্ক্লেরসিস যে মানুষের থেকে ভিন্ন, এই কথাগুলো বিবেচনায় আনা হয় নি। 

এর ফলে দেখা যায়, ১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি, সারা পৃথিবীজুড়ে ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো হন্যে হয়ে রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা কমাবার একটা ঔষধ আবিষ্কারের চেষ্টা করছে তাদের গবেষণাগার গুলোতে।

এদেরই মধ্যে একটি কোম্পানি হল উইলিয়াম এস মিনারেল কোম্পানি, যারা আমেরিকায় ‘ফালিডিমাইড’ ঔষধটি চালু করেছিলো। তারা কোলেস্টেরল কমাবার একটি ঔষধ খুঁজে পান যার নাম টপ্যারানল, অন্য নামে যাকে মার-২৯ বলা হত। ১৯৫৯ সালে এই ঔষধটি এফ ডি এ এর অনুমোদন পায়, যা অতিদ্রুত বাণিজ্যিক সফলতা লাভ করে। 

আর্থিক লাভের কথা বাদ দিলে, দেখা যায় এটি ছিল স্বাস্থ্যগত দিক থেকে একটি অপূরণীয় সর্বনাশ। ১৯৬২ সালে, বহু মানুষ এর মারাত্বক এবং স্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় খতিগ্রস্থ হবার পর, এই ঔষধকে বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। 

উদাহরণ হিসাবে, এখন আপানারা দেখতে পাচ্ছেন একটি ৬ বছর বয়সী শিশুর চোখে স্থায়ী ছানি যার কারন ছিল এই ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে ছিল চুল পড়া, ত্বকের অসুখ এবং এথ্রস্ক্লেরসিস এর গতি বেড়ে যাওয়া, অথচ হাস্যকর কথা হল, এর চিকিৎসার জন্যেই এই ঔষধ আবিষ্কার করা হয়েছিলো। এই সবগুলো স্বাস্থ্য ক্ষতির কারন ছিল এই ঔষধ যা দেহের প্রাকৃতিক কোলেস্টেরল উৎপাদন ব্যহত করছিলো। এই পদ্ধতি যে ভালো কোন পদ্ধতি নয়, তা যেন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো। 

এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলোতে অবাক হবার মতও কিছু ছিল না। পশুদের উপর করা প্রাথমিক পরীক্ষায় এমন একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ধরা পরেছিল। এই ইঁদুরটির কথাই ধরুন। ৯ সপ্তাহ ধরে ট্রিপারানল খাওয়ানোর পরে, ৪৪ টি ইঁদুরের মধ্যে এই একটিই বেঁচেছিল।

১৯৬৩ সালে আমেরিকার গ্র্যান্ড জুরি জানতে পারে যে উইলিয়াম এস মিনারেল কোম্পানি শুধু এই ঔষধের ঝুঁকির কথা গোপনই করেনি, বরং মিথ্যা তথ্যও দিয়েছিল। যেমন, গ্রাফ পরিবর্তন করে উপকার দেখানো হয়েছে, চুল পড়া কে অন্য কারনে হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে, ছানি পরার কথা নথিতে লিপিবদ্ধ করা হয়নি ইত্যাদি। এমনকি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের শেখানো হয়েছিল কি করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দোষ অন্য ঔষধের উপর দিতে হবে। এই কোম্পানিকে প্রাথমিক ভাবে ৮০ হাজার ডলার জরিমানা করাহয় এবং পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে খতিগ্রস্থ গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ এবং মামলার খরচ হিসাবে ব্যয় হয় আরও ৫০ মিলিয়ন ডলার।

এর ফলে একটি শূন্যতা সৃষ্টি হয় যার ভিত্তি ছিল প্রথমত একটি বিশ্বাস যে কোলেস্টেরলই হৃদরোগের কারন এবং দ্বিতীয়ত বাজারে কোলেস্টেরল কমাবার কোন ঔষধ না থাকা। আর এই শূন্যতা থেকেই স্টাটিন ঔষধের জন্ম হয়। ১৯৭৬ সালে জাপানি বিজ্ঞানী একিরও এন্ড, একটি মাইকো টক্সিন বের করেন যার নাম এম এল ২৩৬বি, যা প্রথম পরীক্ষা মূলক স্টাটিন হিসাবে ব্যাবহ্রিত হয়। ১৯৭৯ সালের মধ্যেই জাপানি ফারমাসিটিক্যাল কম্পানি সিনকায়ো এবং আমেরিকার মার্ক দেখা গেল একই স্টাটিন এর উপর গবেষণা করছে। তারা প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হল যে কে প্রথমে স্টাটিন বাজারে আনতে পারে। তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, জয় যার হবে, সে বিশাল অঙ্কের লাভ করবে। কিন্তু ১৯৮০ সালে সিনকায়ো, এই প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসে কারন তারা দেখতে পান যে, যে কুকুর গুলোর উপরে তারা পরিক্ষামুলকভাবে স্টাটিন ব্যাবহার করেছেন, তাদের অর্ধেকেরই ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্যান্সার লিম্ফোমা হয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত নেন যে এই ঔষধটি মানুষের ব্যবহারের জন্য অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং গবেষণা বন্ধ করে দেন। মার্ক ও কিছুদিন পরে একই সিদ্ধান্তে পৌছায়। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে মার্ক এর বিজ্ঞানীরা স্টাটিন নিয়ে গবেষণা পুনরায় শুরু করার অনুমোদনের জন্য চেষ্টা চালাতে থাকে। এই উদ্দেশ্যে তারা জাপানিদের গবেষণাকে খাট করতে দাবী তোলেন যে জাপানি বিজ্ঞানীগণ তাদের কুকুরগুলোর ক্যান্সার সনাক্ত করতে ভুল করেছিলেন, যেন এমন বোকার মত ভুলও বিজ্ঞানীরা করেন। এই বলে তারা তাদের গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। শেষে ১৯৮৭ সালে, মার্ক প্রথম স্টাটিন এর জন্য এফ ডি এ এর অনুমোদন লাভ করে। এটা ছিল সেই একই স্টাটিন যা সিনকায়ও মানুষের জন্যে ক্ষতিকর বলে ঘোষণা করেছিলো। 

এর নাম ‘লোভাস্টাটিন’। কিন্তু সেখানেই এই গল্পের শেষ নয়। ১৯৯০ সালে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ বিশেজ্ঞদের নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে যার আলোচ্য বিষয় ছিল যে কোলেস্টেরল কমানো আসলে স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর কিনা। এবং এই বিশেষজ্ঞ প্যানেল এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হন যে, কথাটি সত্য হতেও পারে। তার পরে ২০০১ এ ফারমাসিউটিক্যাল কোম্পানি ‘বেয়া’, বেশ কিছু রোগীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর পরে, বেইকল নামে তাদের স্টাটিন ঔষধ বাজার থেকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এই শতাব্দীতে ঘটে থাকলেও, অনেকই জানেন না যে ‘বেয়া’ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী খরচ করেছে তাদের বিরুদ্ধে করা হাজার হাজার ক্ষতিপূরণের মামলা মেটাতে, যেই ক্ষতির মুলে ছিল তাদের স্টাটিন। 

স্টাটিন এর সম্ভাব্য ক্ষতির তালিকাটি খুবই লম্বা। এর থেকে ডিমেশিয়ার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। 

হাড়ক্ষয় বা অস্টিওপরসিস এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

দেহে তেস্টস্টেরনের মাত্রা কমায়। 

ইরেক্টাইল ডিস্ফাংশন বা ধ্বজ ভঙ্গ রোগ এবং শুক্রাশয়ের আকার ছোট হয়ে জাওয়ার সাথে সহ-শংঘটিত

এমন কি এটা ডায়বেটিসের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, উইমেনস হেলথ ইনিশিয়েটিভ গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, এটি মহিলাদের ডায়বেটিস হবার ঝুঁকি প্রায় ৭১% বাড়িয়ে দেয়। 

এমনো নয় যে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা গোপন, বরং স্টাটিন ঔষধের প্যাকেট এর ভেতর যে তথ্যপত্রটি দেয়া থাকে, সেটি খুললে আপনি নিজেও দেখতে পাবেন তারা যে বিষয় গুলো নিয়ে সতর্ক করেছেন, তার মধ্যে আছে 

লিভার ক্যান্সার 

ভীষণরকম পেশীর ক্ষতির সম্ভবনা

এমনকি একটি সতর্কবাণীতে তারা, ৬৫ বছরের বেশী বয়স্কদের স্টাটিন দেবার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। আর আছে, 

প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া

ডায়বেটিস হবার অধিক ঝুঁকি  ইত্যাদি।

বাজারজাত করার পরপর যে তথ্য পাওয়া যায় ব্যাবহারকারিদের কাছ থেকে, সেটা আরো চমকপ্রদ। সেখান থেকে জানা যায় যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছে বিষণ্ণতা, ঘুমাতে না পারা থেকে শুরু করে ফুসফুসের রোগ এবং গাইনোকামাশ্চিয়া (পুরুষদের স্তন বড় হয়ে যাওয়া)।

তবে  যদি কেউ এই আশ্বাস দেন যে স্টাটিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই নগণ্য, অবশ্যই সেটা রোগীদের আস্থা বাড়ায়। যেমন, স্টাটিন ব্যবহারকারী প্রতি শত জনের মধ্যে ১ জনেরও কম ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। অথবা প্রতি ২০০ জনের মধ্যে একজনের হতে পারে। আর এমন দাবী যদি আসে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অভিজ্ঞ প্রফেসর ডঃ ররি কলিন্স এর মুখ থেকে, তাহলে তো আর কোন কথাই থাকে না। 

তবে পুরো বিষয়টি বেশ ঘোলাটে হয়ে দাড়ায়, যখন সেই একই ডঃ ররি কলিন্স, স্টাটিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কেউ ভুগছেন কিনা তা নির্ণয় করার জন্য একটি পরীক্ষা উদ্ভাবন করেন এবং সেই উদ্ভাবন যেন কেউ নকল করতে না পারে, তার অধিকার বা পেটেন্ট এর জন্য আবেদন করেন। অথবা যে ওয়েবসাইট তার উদ্ভাবিত পরীক্ষা বিক্রি করছে, সেখানে দাবী করা হয় যে প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ যারা স্টাটিন ব্যবহার করেন, তাদের পেশী তে ব্যথা সহ অন্যন্ন পারস্বপ্রতিক্রিয়া হয়। 

সত্য হচ্ছে যে, ০.৫% থেকে ১% এর পরিবর্তে ২৯% সংখ্যাটিই সঠিকের কাছাকাছি। দেখা যাচ্ছে স্টাটিন এর গবেষণা এমনভাবে নক্সা করা হয় যেন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সংখ্যাটি বাস্তব থেকে কম হিসাবে দেখানো যায়। উদাহরণ হিসাবে ধরুন এই বিশাল গবেষণাটির কথা, যেখানে গবেষণার কাল বা রানিং পিরিয়ড বলে একটি ধারনা ব্যাবহার করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের সকলকে মূল গবেষণা শুরুর আগে প্রথমে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ ধরে, প্রথমে একদম একই রকম দেখতে ঔষধ বিহীন বড়ি খাওয়ানো হয় এবং এরপরে আসল ঔষধ দেয়া হয়। এই সময়ে কেউ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দাবী করলে, তাদেরকে মুল গবেষণা থেকে বাদ দেয়া হয়। এই উপায়ে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বা এগার হাজারেরও বেশী অংশগ্রহণকারী কে শুরুতেই বাদ দেয়া হয়। গবেষণা শুরুর আগেই যদি, যাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বেশী তাদেরকে বাদ দেয়া হয়, তাহলে মূল গবেষণায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার কম হবে, এত সহজেই বোঝা যায়।

বাস্তবতা হল এই যে, প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন প্রচলিত মাত্রার স্টাটিন থেরাপি সহ্য করতে পারেন না যা ফারমাসিউটিকলস কোম্পানির করা গবেষণা থেকে জানা যায়। আরও আধুনিক এবং দামি একটি স্টাটিন গবেষণার বিবরণপত্রের মাঝে অল্প কথায় লেখা ছিল যে, সহনীয়তা পরিমাপ করতে গিয়ে কমপক্ষে দুইজন ডাক্তার এই বিশাল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন; সাথে এটাও মনে রাখবেন যে, রোগীদের যদি বলা হয় যে এই ঔষধ তাদের আয়ু বাড়াবে, তাহলে তারা স্বল্প মাত্রার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ্য করতেও রাজি থাকেন। তার অর্থ হচ্ছে যে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারনে যদি কেউ স্টাটিন না খেতে পারেন, তাহলে তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোটেও সামান্য নয়। 

তাহলে এর পরে যে প্রশ্নটি এসে যায়, তা হল, এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো থাকা সত্ত্বেও, মৃত্যুকে দুরে ঠেলে দিতে স্টাটিন কতটা কার্যকর? আরো সহজ করে বললে, কি মাত্রায় কতদিন স্টাটিন খেলে, একজনের আয়ু কতটা বাড়বে? আর এই চমৎকার গবেষণাটি সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, কোন বাছবিচার ছাড়াই এযাবৎ প্রকাশিত সব গুলো স্টাটিন গবেষণা থেকে তথ্য নিয়ে। এতে তারা ১১টি গবেষণা থেকে উপাত্ত ব্যবহার করেন, যেই গবেষণাগুলোতে অংশ নিয়েছিল ৯০ হাজারেরও বেশী মানুষ। এই গবেষণায় দেখা যায় যে, যারা একবার হার্ট অ্যাটাক হবার পরে স্টাটিন ব্যাবহার শুরু করেছেন, গড়ে তাদের আয়ু বেড়েছে ৪.৫ দিন। আর যাদের হৃদরোগ আগে ছিল না, তাদের ক্ষেত্রে ৩.২ দিন। অর্থাৎ বহু বছর ধরে স্টাটিন ব্যাবহার করার পর, লোকের আয়ু বাড়ে ৩ থেকে ৪ দিন। সাথে লক্ষ্যনীয় যে, এই গবেষণাটির ফল স্টাটিনের পক্ষে যাবার একাধিক কারন আছে, অর্থাৎ এই ফল পক্ষপাত মুক্ত নয়। 

প্রথমত, এই গবেষণায় স্টাটিনের উপর করা সব গবেষণাকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি কারন ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো তাদের করা গবেষণার বিস্তারিত উপাত্ত নিরপেক্ষ  বিচার-বিস্লেশনের জন্য প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। এই সমস্যার এখনো কোন সমাধান করা যায়নি। 

এবারে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি স্টাটিন ব্যবহারের উপর করা আর সি টি বা নিরপেক্ষ-নিয়ন্ত্রিত গবেষণাগুলোর তথ্য নির্ভর একটি মেটা এনালিসিস যা এই বছর (২০২১) ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছে। এতে পাওয়া যায় যে ৫০ থেকে ৭৫ বছর বয়সীরা স্টাটিন ব্যবহার করলেও তাদের আয়ু বাড়ে না। লক্ষণীয় যে, এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৮টি গবেষণার মাত্র একটিতে উপকার পাবার দাবী করা হয়। জুপিটার ট্রায়াল নামে পরিচিত এই গবেষণায়, তারা উচ্চ মাত্রায় যাদের এল ডি এল রয়েছে, তাদেরকে অংশ নিতে দেন নি। জ্বি, ঠিকই শুনেছেন, উচ্চ মাত্রায় এল ডি এল এর উপর স্টাটিনের প্রভাব বিশ্লেষণ কে তারা এই গবেষণা থেকেই বাদ দেন। তার উপরে, সব অংশগ্রহণকারীর সি রিয়্যাক্টিভ প্রোটিন বা সি আর পি হতে হয়েছিল ২ বা তার কম। খেয়াল করুন যে সি আর পি হচ্ছে দেহের প্রদাহের মাত্রার নির্দেশক যা হৃদরোগের সাথে সম্পৃক্ত।  আর এমন সাঙ্ঘাতিক রকম সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও, যারা স্টাটিন ব্যাবহারকে উৎসাহিত করেন, তারা এই গবেষণাটিকেই বার বার তাদের পক্ষের প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরেন যা অন্য গবেষণা গুলোকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা বলেই প্রতীয়মান হয়। 

এছাড়াও, প্রচার মাধ্যমে এই জুপিটার ট্রাইয়াল গবেষণাটির প্রশংসার দিকে নজর দিলে দেখা যায় খারাপকে ভালো হিসাবে  উপস্থাপনের একটি চেষ্টা। 

জুপিটার ট্রায়াল ভিত্তিক প্রকাশনা গুলো সর্বাধিক চাঞ্চল্যকর। উদাহরণ হিসাবে “দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস” এ প্রকাশিত এই প্রবন্ধটির কথা ধরুন। এতে বলা হয় যে স্টাটিন ব্যবহারকারীদের স্ট্রোক সম্ভাবনা, স্টেন্ট প্রয়োজনীয়তা এবং বাইপাস সার্জারির প্রয়োজনীয়তা ৫০% কমে যাবে! শুনতে অত্যন্ত চমৎকার, তাই না? 

চলুন আমরা একটু ঘেটে দেখি। তাদের দাবী দেখা যাচ্ছে, পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে একত্র করে করা, যা শুরুতেই একটি সমস্যা। বিষয়গুলো হল ১) মৃত্যু ঘটায় নি এমন হার্ট অ্যাটাক হওয়া ২) মৃত্যু ঘটায়নি এমন স্ট্রোক হওয়া ৩) এঞ্জাইনা জনিত কারনে হাসপাতালে যেতে হাওয়া ৪) হৃদরোগ জনিত মৃত্যু এবং ৫) আরটেরিয়াল রি ভাস্কুলারাইজেশন এর ব্যাবহার। এই কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, কেউ আরটেরিয়াল রি ভাস্কুলারাইজেসন ব্যবহার করলেই, যেমন স্টেন্ট বসালেই, তা থেকে এটা প্রমানিত হয় না যে তা আবশ্যকীয় ছিল। যাই হোক, এই সবগুলো বিষয়ে উপকার হবার সম্ভাবনাকে একত্রে যোগ করে, জুপিটার ট্রায়াল দাবী করে ৪৪% ঝুঁকি কমা। 

কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এই ৪৪% আপেক্ষিক ঝুঁকি কমার অর্থ আসলে কি? এই গবেষণা চলাকালীন সময়ে স্টাটিন ব্যাবহারকারি দলের ১.৫% মানুষ এবং ঔষধ বিহীন স্টাটিনরূপি বড়ি খাওয়া দলের ২.৭% মানুষদের এই পাঁচটির কোন একটি বা একাধিকের প্রয়োজন হয়েছিলো। তাহলে এখন এদেরকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করলে, আসলেই দেখা যায় যে ১.৫ হচ্ছে ২.৭ এর থেকে ৪৪% কম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কতটা পার্থক্য হয়েছিলো, সেটা বোঝাবার জন্যে আমি এই গ্রাফে দুটো কে পাশাপাশি বসিয়ে দেখিয়েছি। এই চিত্রটিকে তেমন হৃদয়গ্রাহী আর মনে হচ্ছে না, তাই না? 

এবং এখন দেখাচ্ছি মৃত্যু ঘটিয়েছে বা ঘটায়নি এমন হার্ট অ্যাটাক এর তুলনা মূলক চিত্র। যেমন দেখতে পাচ্ছেন যে, জুপিটার ট্রায়াল এর স্টাটিন ব্যবহারকারী এবং বিহীন দলের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক সংখ্যার পার্থক্য প্রায় নজরেই পরে না। অথচ এই চিত্রকেই ৫৪% আপেক্ষিক ঝুঁকি হ্রাস হিসাবে দাবী করা যায়। 

একটু ভেবে দেখুন যে কি হতে পারে যদি আমরা এমন দুরভিসন্ধিমূলক প্রচার কে একটু ঘুরিয়ে ব্যাবহার করি? যেমন স্টাটিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্যকেও আমরা বাস্তব চিত্র উপস্থাপনের পরিবর্তে আপেক্ষিক রূপে উপস্থাপন করি? এখানে উপস্থাপিত নিউ ইয়র্ক টাইমস এর লেখাটির শিরোনাম ইংগিত দিচ্ছে যে স্টাটিন স্মৃতি শক্তির উপর প্রভাব ফেলে না। 

চলুন হিসেব করে দেখি। প্রায় ৪ লক্ষ ৯০ হাজার স্টাটিন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৩৭৬ জন দাবী করেছেন যে তারা স্বল্প মেয়াদে স্মৃতি শক্তি হারিয়েছেন। ওদিকে স্টাটিন না ব্যবহারকারী দলের ১১৪ জনের ক্ষেত্রে ঘটেছে এই ঘটনা। আপেক্ষিক তুলনা ব্যবহার করলে, এর অর্থ দাড়ায় যে স্টাটিন ব্যবহারকারীদের স্মৃতিশক্তি হারানর ঝুঁকি প্রায় ৩০০% বেশী। এরপরে স্টাটিন ব্যবহারের সাথে অসম্পর্কিত ঘটনাগুলোকে বাদ দিলে, এই ঝুঁকি বেড়ে দাড়ায় ৪২০%। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে যে নিউ ইয়র্ক টাইমস এর উপর ভিত্তি করে এমন খবর লিখল না কেন, যে স্টাটিন ব্যবহার স্মৃতিশক্তি হারাবার ঝুঁকি ৪ গুন বাড়িয়ে দেয়। 

আমি মনে করি, এখানে শিক্ষণীয় বিষয় হল যে, খবরের কাগজ থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা লাভের চেষ্টা করা বোকামি। কিন্তু বিপদ হচ্ছে যে, ডাক্তারগণও আমাদের কে এর থেকে ভালো কিছু দিতে পারছেন না, যে বিষয়ে আমি ভবিষ্যতে আলোচনা করব। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারদেরকে জোর করে এমন কাজ করানো হয়, যেমন রোগীকে স্টাটিন ব্যবহার করতে বলা, যদিও তা উপকারী হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন না। শেষ কথা হচ্ছে, আপনার অধিকার আছে, আপনার চিকিৎসকের উপদেশের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার, এবং যে তথ্যপ্রমাণের উপর নির্ভর করে চিকিৎসক এই উপদেশ দিচ্ছেন, সেই প্রমাণ দেখতে চাওয়ার। ব্যাক্তিগত ভাবে, আমি আমার রোগীদের কাছ থেকে তাই আশা করি। ধন্যবাদ!